সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপাসাগরের পূর্ব উপকূলে কক্সবাজার জেলা শহরের অবস্থান। উত্তরে হারবাং এর সুউচ্চ পাহাড় থেকে দক্ষিনে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে নাফ নদীর কোলঘেঁষে সাবরং এর শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত এর অবস্থান। জেলাটির আয়তন ১৩৯১.৮৫ বর্গকিলোমিটার। লোক সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। বঙ্গোপসাগরে বুকে মৎস ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কক্সবাজারের দর্শনীয় বেশ কয়েকটি ধাপ।
মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি, শাহপরী, সেন্টমার্টিন কক্সবাজার কে করেছে আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন। জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও নাফ নদী। পর্যটন, বনজসম্পদ, মৎস্য, শুটকি মাছ, শামুক-ঝিনুক ও সমৃদ্ধ বালুর জন্য কক্সবাজারের অবস্থান ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের কাছে সবার শীর্ষে।
সমুদ্রতটের অপার সম্ভাবনাময় সমৃদ্ধির আশায় এখানে ছুটে এসেছে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ইংরেজরা। কালের বিবর্তনে এখানে লেগেছে উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ছোঁয়া। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার কক্সবাজারকে মহকুমায় উন্নীত করেন। ১৯৮৪ সালে ১মার্চ কক্সবাজারকে পূর্ণাঙ্গ জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। ২০০২ সালে ৮টি উপজেলা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কক্সবাজার সদর-রামু, চকরিয়া,পেকুয়া মহেশখালী,কুতুবদিয়া ও টেকনাফ।
কক্সবাজারে ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্যাবলীঃ
ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের অবস্থান। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যেতে হয়। পাশাপাশি ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রাম নেমে বাসে কক্সবাজার পৌঁছানো যায়। সরাসরি বিমানে কক্সবাজার যাবার সুযোগ আছে। অনেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাসে গিয়ে তারপর সেখান থেকে কক্সবাজার বিমানে গিয়ে থাকেন। এতে বিমান থেকে নিচের প্রাকৃতিক দৃশ্যবলি দেখার সুযোগ মেলে পাশাপাশি খরচও কম হয়।
# কক্সবাজারে থাকার জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারা সুবিধার হোটেল। এছাড়াও ছোট-বড় অনেক হোটেল, রেস্ট হাউস বা বোর্ডিং। শীত মৌসুমে যারা কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে চান তাদের আগেভাগেই হোটেলের সিট বুক করা ভাল।
# একাকী ভ্রমণের চেয়ে দলগতভাবে ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক। এক্ষেত্রে দলের সঙ্গে থাকুন বিচ্ছিন্ন হয়ে চলাচল না করাই উত্তম এতে খরচও বেশি হয়।
# প্যাকেজ ট্যুরের ব্যাপারে ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে বিস্তারিত জেনে নিয়ে তবেই বুকিং দিন। কোন সমস্যা দেখা দিলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এদের অফিসের মোবাইল নম্বর ও গাইডের নম্বর সংরক্ষণ করুন।
বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতঃ
কক্সবাজার গিয়ে প্রথমেই আপনার ভ্রমণ স্থল হতে পারে সমুদ্র সৈকত। সৈকতের চেয়ারে বসে সমুদ্রের ঢেউয়ের দুরন্তপনা দেখতে দেখতে হারিয়ে যেতে পারেন অজানা কোন ভুবনে। তবে এসময় সমুদ্রস্নানে খুব সাবধানতার সঙ্গে নামুন। লাল পতাকা নির্দেশিত সময় অবশ্যই সমুদ্রস্নানে নামবেন না। অন্য সময় নামলেও খুব কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করুন এবং স্নান শেষ করে জলদি উঠে আসুন।
বিশাল সাগরের বুকে দৃষ্টি দিলে শুধু পানি আর পানি। সমুদ্রের গর্জন আর নীল জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অন্যরকম শিহরন যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
চাঁদের গাড়ীতে ঘোড়ার পাশাপাশি চাঁদের আলোয় বালুকাবেলায় ঘোরার জন্য কক্সবাজারে সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এসবের পাশাপাশি বৌদ্ধ বিহার ও উপজাতীয় মানুষের জীবনাচার দেখা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ, ওদের সঙ্গে সময় কাটানো, রাখাইনদের হাতে তৈরি পণ্য কেনা, স্পিড বোর্ডে জার্নি কিংবা মহেশখালীর পাহাড়ের উপরে ৬০০ বছরের বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির দর্শন, মহেশখালীর মজাদার পানির স্বাদ গ্রহণ। সবই সম্ভব একমাত্র কক্সবাজারে। কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণ। পাহাড়, সমুদ্র,বন,লেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ শুধু কক্সবাজারেই আছে।
কক্সবাজারের আশেপাশেঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে ফিরে যেতে পারেন হিমছড়ি কিংবা ইনানী। এখানে যাবার জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা, বেবী টেক্সি বা জিপ আছে। রিকশা গেলে পুরো পথটাই হবে আপনার জন্য অনেক মজার। হিমছড়ির পাহাড় ঝর্ণা আর ইনানী সৈকতের ঘুরে আবার শহরে চলে আসুন। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার আর ইনানীর প্রায় ২০ কিলোমিটার। ঘন্টা পাঁচেক সময় লাগবে জায়গা দুটি থেকে বেরিয়ে আসতে। সন্ধ্যার আগেই আবার সৈকতে ফিরতে ভুল করবেন না। এ সময়ের সূর্যাস্তের দৃশ্যও বেশ মনোহর। ভাগ্য ভালো থাকলে আকাশের রংয়ের খেলা আর লাল থালার মত সূর্যের ডুবে যাওয়া এই সময়েই দেখা যায়। আর ভাগ্যটা নিতান্তই খারাপ হলে বাদ সাধতে পারে আকাশের কালো মেঘ।
পরের দিন যেতে পারেন কক্সবাজার শহরের পার্শ্ববর্তী থানার রামু ও চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। রামুতে আছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বেশ কিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে জিপে কিংবা মাইক্রোবাসে এখানে আসতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা ও স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৫ টাকা।
হিমছড়ির ঝরনায়ঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশের পিচঢালা মনোরম পথ ধরে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির এক বিচিত্র সৌন্দর্যে ভরপুর হিমছড়ি। সুউচ্চ পাহাড় দেখে যাদের উপরে ওঠার সাধ তাদের জন্য রয়েছে বিশাল সিঁড়িপথ। উপরে বিশ্রামাগার। এখানে প্রবেশের জন্য মাথাপিছু ৪০ টাকা হিসেবে টিকিট কাটতে হয়। শীত মৌসুমে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে অসংখ্য চাঁদের গাড়ি কিংবা সিএনজি অটোরিক্সায় যাওয়া যায়।
![]() |
| Beach Bike |
রোমাঞ্চকর বিচ বাইকঃ
তিন চাকা বা চার চাকার ছোট ছোট বিচে চলার উপযোগী বাইক কক্সবাজার সাগর সৈকতে চলাচল করে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে এসব বাইক রাউন্ড প্রতি ৫০ টাকা করে পর্যটকদের প্রধান করতে হয় এছাড়া ঘোড়ায় চড়াতে পারেন বাচ্চাদের।
![]() |
স্পিডবোটে সমুদ্র ভ্রমণঃ
বিচে চলে বেশ কয়েকটি স্পিডবোট। মেইন বিচ থেকে এগুলো চলাচল করে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত। ভাড়া এক রাউন্ড ৫০ টাকা এছাড়া খোলা স্পিডবোট এর সাহায্যে লাইফ বোট জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা।
![]() |
| Beach photography |
বিচ ফটোগ্রফিঃ
কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ বিচ ফটোগ্রাফার পর্যটকদেরও ছবি তুলে থাকে। প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এসব ছবি প্রিন্ট করে নেগেটিভ পর্যটকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রয়েছে। একই রকম লাল রঙের পোশাক ফটোগ্রাফারদের প্রত্যেকের রয়েছে একটি করে আইডি কার্ড। বেশ কয়েকটি স্টডিও এর সঙ্গে জড়িত। তবে এদের দিয়ে ছবি না তোলাই ভালো। কারণ আপনার নিজের ব্যক্তিগত ছবি তাদের কাছে রয়ে যেতে পারে এবং তারা সেই ছবি খারাপ কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
সমুদ্রে নামার আগে সতর্কতাঃ
সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। এসম্পর্কিত ইয়াছির লাইফ গার্ডের বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড পতাকা রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসলে নামা নিরাপদ। জোয়ারের সময় নির্দেশিত থাকে। পাশাপাশি সবুজ পতাকা উড়ানো হয়। ভাটার সময় সমুদ্রে স্নান বিপদজনক। ভাটার টানে মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে পারে যে কেউ। তাই এই সময় বিচ এলাকায় লাল পতাকা ওড়ানো হয়।





No comments:
Post a Comment