শরণখোলা, বাগেরহাট




 প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের পর্যটন শিল্পের জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রচার ও সদিচ্ছার অভাব এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ের অভাবে অপার সম্ভাবনাময় এ খাতটি এখানে বিকশিত হতে পারছে না। সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কিছু অভয় আশ্রম হয়ে উঠতে পারে এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবনের ৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষ, ১৬৫  প্রজাতির সাগর শৈবাল, ১৩ প্রজাতির পরাশ্রয়ী অর্কিড রয়েছে। 

সুন্দরী এ বনের প্রধান বৃক্ষ।মোট বনাঞ্চলের ৭৩ ভাগ জুড়েই রয়েছে সুন্দরী। এছাড়া কেওড়া,বাইন, পশুর,ধুন্দল, কাঁকড়া, গরান, হেঁতাল, ও গোলপাতা উল্লেখযোগ্য। ২৬৯  প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ১৮৬ প্রজাতির পাখি ও ২১০ প্রজাতির মাছ রয়েছে এই রেঞ্জের বনে। বন্য প্রাণীর মধ্যে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রল হরিণ,ভয়ঙ্কর কুমির, বানর, শূকর ও গুইসাপ উল্লেখযোগ্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও সমুদ্রের বিশাল জলরাশির কারণে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলীয় অভয়ারণ্য সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এ অংশটি সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের অন্তর্গত। সুন্দরবনের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় অঞ্চল কটকা ও কচিখালি  রয়েছে এ অংশেই। 

কটকা কচিখালী ছাড়াও শরণখোলা রেঞ্জের বাদামতলা, জামতলা, তিনকোনা আইল্যান্ড, জেলেপল্লী দুর্বল পর্যটকদের কাছে সমাদৃত। সাগরতীরে কটকা অভয়ারণ্য। এখানকার মনোরম পরিবেশ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ঘরের বারান্দায় বসে চোখের সামনে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ পর্যটকদের উচ্ছসিত করে তোলে। বিকালে বিশ্রামাগারের চারপাশে হাজার হাজার চিত্রল হরিণের ছোটাছুটি, বানরের কোলাহল আর সকালে নদীর পাড়ে কুমিরের রোদ পোহানোর দৃশ্য অপূর্ব।  এখানে বিশ্রামাগার প্রান্তিক-এ ৪ শয্যাবিশিষ্ট দুইটি কক্ষ রয়েছে।  

পূর্ব অভয়ারণ্যের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে সাগর তীরে গড়ে উঠেছে কচিখালি। সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য এখানে গড়ে উঠেছে একটি বড় ধরনের বিশ্রামাগার ১ শয্যাবিশিষ্ট  তিনটি ও ২ শয্যা বিশিষ্ট একটি বেডরুম, ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুমের সমন্বয়ে এ বিশ্রামাগার। এটি অত্যন্ত মনমুগ্ধকর। প্রতি শীত মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস এখানে কৌতুহলী পর্যটকদের ভিড় থাকে। তারা এখানকার সাগরপার আর ছনক্ষেতে  খুঁজে ফেরে বহু প্রত্যাশিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ঝাঁক বাধা চিত্রল হরিণ ছুটে বেড়িয়ে বন্ধুদের জানিয়ে দেয় পর্যটকদের আগমন বার্তা। তাই শুনে মুচকি হাসে গাছে গাছে বানরের ঝাঁক।  



নিস্তব্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ আবার হঠাৎ করে চেনা অচেনা পাক-পাখালির কল-কাকলি জাগায় শিহরণ।  কটকা কেন্দ্রের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান জামতলা। জামতলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার যেখানে থেকে বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে  হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি আবার কখনো রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যেতে পারে।  

কচিখালি আর কটকার ঠিক  মধ্যবর্তী স্থানের নাম বাদামতলা।  বাদামতলা অত্যন্ত নির্জন এক সমুদ্র সৈকত। সেখানে আছড়ে পড়া সামুদ্রিক ঢেউ   পর্যটকদের মন কাড়বে। শীতকালে বাদামতলার সৈকতে অজস্র বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। কচিখালি ও জামতলা থেকে পায়ে হেটে বাদামতলা পৌঁছানো সম্ভব। সাগরদ্বীপ দুবলাসহ সন্নিবেশিত ১০ টি চরে মৎস্য মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মৎস্যজীবী ভিড় জমায়।  অক্টোবরে এরা আসা শুরু করলেও নভেম্বরে রাসমেলা নামক এক ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের বছরের কাজ শুরু হয় দু'শ বছরের ঐতিহ্যে লালিত এ রাসমেলাতেও দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় জমায়। শরণখোলা রেঞ্জে যোগাযোগ ও যাতায়াতের জন্য এ রেঞ্জ বিশেষ উপযোগী। 

 ঢাকা-চট্টগ্রাম খুলনা ও বাগেরহাট থেকে বাসযোগে শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে আসতে হবে এখানে সাস্রয়ী ভাড়ায় বিভিন্ন ধরনের লঞ্চ ও ট্রলার ভাড়া পাওয়া যায়। শরণখোলা রেঞ্জের মাধ্যমে পূর্ব বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে শরণখোলা থেকে কচিখালি যেতে থেকে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় লাগে। শরণখোলা থেকে এর দূরত্ব যথাক্রমে 30 থেকে 40 কিলোমিটার। 

No comments:

Post a Comment

@templatesyard